রক্তের জন্য হাহাকার, ঘুম নেই ব্লাড ব্যাংকের কর্মীদের
প্রকাশিত : ১৪:৫৫, ২৭ অক্টোবর ২০২২
ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে ফাঁকা নেই শয্যা। এসব ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে রক্ত। চাপ বাড়ছে ব্লাড ব্যাংকগুলোতে। রক্ত যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী রক্ত দিতে পারছেন না তারা। গত ৩ মাস ধরে ব্লাড ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ-তিনগুণ। দিনে পঞ্চাশ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগীর জন্য রক্ত চাচ্ছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের ১০০ জনের ৭০ জনই ডেঙ্গু রোগীর জন্য রক্ত খুঁজছেন।
রক্ত গ্রহীতাদের চাহিদা অনুযায়ী রক্তদাতা পাচ্ছে না ব্লাড ব্যাংকগুলো। অনেক গ্রহীতারা রক্ত না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে ব্লাড ব্যাংকের কর্মীদের চোখে নেই ঘুম। কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে রাতদিন পরিশ্রম করছেন রক্ত সংগ্রহে।
রক্তের জন্য ব্লাড ব্যাংকের সামনে গ্রাহকদের ভিড়। প্রতিদিন অনেকে ফোন করছেন আবার কেউ সরাসরি ব্লাড ব্যাংকগুলোতে ছুটে আসছেন। রক্তের চাহিদা অনুযায়ী সবাইকে তারা রক্ত সংগ্রহ করে দিতে পারছেন না। হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এদিকে রক্ত না পেয়ে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ছুটছেন স্বজনরা। রক্ত গ্রহীতাদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। একজন রোগীর জন্য ষোল ব্যাগ পর্যন্ত রক্তেরও প্রয়োজন হচ্ছে। এক একটি ব্লাড ব্যাংকে প্রতিদিন পঞ্চাশ থেকে সত্তর জন রোগীর জন্য রক্ত চাওয়া হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ চাহিদা বেড়েছে রক্তের। ১০০ জন গ্রহীতার মধ্যে ৭০ জনই ডেঙ্গু রোগীর জন্য এসেছেন।
কোয়ান্টাম ব্লাড ব্যাংক ল্যাবের অরগ্যানাইজার শামীমা নাসরিন মুন্নি বলেন, “ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্ল্যাটিলেটের চাহিদাটা বেশি থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এ সকল রোগীদের জন্য প্ল্যাটিলেটের চাহিদা অনেক বেশি। কোয়ান্টাম ল্যাবে আগে মাসে প্ল্যাটিলেটের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৫০০ ব্যাগের মতো কিন্তু জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার ব্যাগ বেড়েছে। মাসে গড়ে আমরা ৩ হাজারের মতো গ্রাহক পাচ্ছি। চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ। চাহিদা অনুযায়ী আমরা গ্রাহকদের দিতে পারছি না। হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে পরিমাণ চাহিদা সেই পরিমাণ ডোনার আমরা পাচ্ছি না।”
তিনি বলেন, “এখন তো ২৪ ঘণ্টাই রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে আসছে। একদম মধ্যরাতে যখন এর চাহিদাগুলো আসছে তখন কোনো ডোনার পাওয়া যাচ্ছে না। ডোনারের কাছ থেকে রক্তটা নিয়ে প্ল্যাটিলেট তৈরি করতে হয়। ফ্রিজের কোনো ব্লাড দিয়ে এটি করা যায় না। সেই সময়টাতে আমাদের নিজেদের খারাপ লাগে। এদিকে দিনের বেলায়ও চাহিদা কম নয়। প্রতি মুহূর্তে যেসব রোগীরা আসছেন তাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি। আমরা সেই পরিমাণ রক্তদাতা এখনো পাইনি। এতে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। ৮০-৮৫ শতাংশ দিতে পারছি বাকিদের দিতে পারছি না।”
শামীমা বলেন, “আমরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি, আমাদের ল্যাব সবসময় প্রস্তুত আছে রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য। কিন্তু রক্তের অভাবটা থেকে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে রক্তের চাহিদাটা পূরণ করার জন্য মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে, সচেতন হতে হবে।”
কোয়ান্টাম ব্লাড ব্যাংক ল্যাবের অরগ্যানাইজার বলেন, “ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্ল্যাটিলেটের চাহিদাটা বেশি থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এ সকল রোগীদের জন্য প্ল্যাটিলেটের চাহিদা অনেক বেশি। কোয়ান্টাম ল্যাবে আগে মাসে প্ল্যাটিলেটের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৫০০ ব্যাগের মতো কিন্তু জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার ব্যাগ বেড়েছে। মাসে গড়ে আমরা ৩ হাজারের মতো গ্রাহক পাচ্ছি। চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ।”
এসএ/